ক্ষমা চাইল পুলিশ, স্বজনেরা চান ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’\
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচার গুলি ও মানুষ হত্যার ঘটনায় শহীদ পরিবারগুলোর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের চার মাস পর গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
পুলিশপ্রধানের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক মনে করেন গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার এবং আন্দোলনে সক্রিয় শিক্ষক ও অধিকারকর্মীরা। তবে তাঁদের দাবি, যাঁদের নির্দেশে ও যাঁদের গুলিতে নির্বিচার মানুষ হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
গত ২১ নভেম্বর আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বাহারুল আলম গতকাল প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করেন তিনি।
এ সময় আইজিপি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের স্বার্থ রক্ষায়, তাদের নির্দেশে পুলিশের কতিপয় সদস্য বাড়াবাড়ি করেছেন এবং আইন ভঙ্গ করেছেন; এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে অনেক নিরপরাধ পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই নিন্দনীয়। আমি পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিটি শহীদ পরিবারের কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ পুলিশ এক বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। পুলিশের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করতে হয়েছে বলে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, পুলিশের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে। নিরপরাধ কেউ মামলার আসামি হলে তাঁকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করা হবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের সময় নির্বিচার গুলি করে মানুষ হত্যার অভিযোগ ওঠে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী ও আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী কর্মীদের বিরুদ্ধে।
এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এই প্রথম পুলিশের পক্ষে বাহিনীপ্রধান ক্ষমা চাইলেন।
দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে শহীদ পরিবারগুলোর কাছে ক্ষমা চাওয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আন্দোলনে রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন। তবে তিনি প্রথম আলোকে এ–ও বলেছেন, পুলিশের যাঁরা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা ক্ষমা পাবেন না। গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। সেখানে বিচারের মাধ্যমে তাঁদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
পুলিশের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে কথা হয় রাজধানীর উত্তরায় নিহত এসএসসি পরীক্ষার্থী নাঈমা সুলতানার মা আইনুন নাহারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত মাস পরে এসে পুলিশ ক্ষমার কথা বলে। এত মানুষকে মারার পরেও আমরা তাদের ক্ষমা করে দেব?’ তিনি বলেন, ‘আমার চারতলার বাসার বারান্দায় টার্গেট করে পুলিশ গুলি করে মেয়েটাকে মেরেছে। আমি এখনো ঘুমোতে পারি না। আমি বিচার চাই। এমনভাবে বিচার করতে হবে, যেন দ্বিতীয়বার কেউ এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়।’